গৌতমী সেনগুপ্ত: দু চোখে অনেক স্বপ্ন৷ একটা একটা ধাপ এগিয়ে প্রিয়াঙ্কা দাস হলিউডের উঠতি পরিচালকের একজন৷ বারাসাতের মধ্যবিত্ত পাড়ার মেয়েটি হলিউড দাপাচ্ছে প্রায় ৬ বছর৷ তাঁর পরিচালিত শর্ট ফিল্ম কান সহ মোট ৪০টি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছে৷ ৪টি শর্ট ফিল্ম বানিয়ে হলিউডের নামী পরিচালকদের নজর কেড়েছেন ২৯ বয়সী এই যুবতী৷ বারাসাত থেকে হলিউড, এত অল্প সময়ে মস্ত উত্থানের গল্প আমাদের বললেন প্রিয়াঙ্কা৷ আড্ডার মেজাজেই জানালেন নিজের চেষ্টায় হলিউডে টিকে থাকার লড়াই৷
নিজেকে কতটা সফল দেখছেন?
প্রিয়াঙ্কা- সফল হচ্ছি, এখনও অনেক পথ চলা বাকি৷ ঠিক কাজ করে এগোতে চাই৷ ভালো ছবি তৈরি করা আমার কাছে সাধনার৷ তাই সাফল্য নিয়ে ভাবি না৷ একটু একটু করে এগোতে চাই৷
বারাসাত থেকে হলিউড, কীভাবে?
প্রিয়াঙ্কা- ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ ধরে৷ বারাসাত থেকে কলকাতায় এসে পড়াশুনা, তারপর সিনেমার প্রতি ভালোবাস৷ নিউইয়র্কে ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশুনার সুযোগ পেলাম৷ আর ফিরে তাকাইনি, নিউইয়র্কে পাড়ি সেই ৬ বছর আগে৷ এখন এখানেই বসবাস৷ রোজই নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই৷
৪টি শর্ট ফিল্ম পরিচালনা, এতটা সাফল্য, ভেবেছিলেন কখনও?
প্রিয়াঙ্কা- না একদমই ভাবিনি৷ আমি পড়াশুনা করতে করতেই শর্ট ফিল্ম বানাই৷ নিজেকে যাচাই করতেই ঝাঁপ দিই৷ হলিউড শিল্পীদের নিয়ে কোনওরকম সাহায্য ছাড়াই নিজেই স্ক্রিপ্ট লিখে পরিচালনা করি, ক্যামেরা হাতে তুলে শট নিই৷ ছবি তৈরির পর মনে হল একবার প্রযোজকদের দরজায় করা নাড়ি৷ ফল পেলাম, ছবি দেখে খুশি হন তাঁরা৷ দিল্লি, কলকাতা, গোয়া, এথেন্স, কান সহ ৪০ টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা করে নেয় আমার পরিচালিত ৪ শর্টফিল্ম৷
কী ধরনের ছবি তৈরি করতে ভালোবাসেন?
প্রিয়াঙ্কা- দেখুন, আমি সাধারণ ঘটনাকেই তুলে ধরি৷ মানুষের ভেতরের অনুভব, খুব সুক্ষ্ম কিছু বাস্তব, যা অনেক সময় আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি না, সেগুলিই আমি ছবিতে তুলে ধরি৷ মানুষের অনুভব রামধনু রঙের৷ এক একটার মানে এক এক রকম৷ সেই সমস্ত রঙ নিয়েই আমি পরিচালনার চেষ্টা করি৷ মনের ভেতরে যে মন, সেই মনকেই ছবিতে তুলে ধরতে চাই৷ ২০১৭ সালে আমার শেষ শর্ট ফিল্ম ছিল ‘রিটার্ন’৷ সেখানে মা-মেয়ের সম্পর্ককে আমি অন্যরকম ভাবে দেখিয়েছি৷ মৃত মায়ের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি, মেয়ের চাক্ষুস করার অনুভূতি৷ তার মধ্যেও মা-মেয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক মেয়েটিকে শক্ত রেখেছে৷ বিষয়টি সাধারণ, কিন্তু গভীর৷
হলিউডে টেঁকা কতটা সহজ?
প্রিয়াঙ্কা- খুব কঠিন৷ আমি আমার টিঁকে থাকার লড়াই নিয়ে কিছু বলব না, কারণ এটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জ৷ আমি প্রতিদিন নিজেকে নতুন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করি৷ আমার পথটাই পুরোপুরি স্বতন্ত্র৷ সহকারী পরিচালক হিসেবে নিজেকে কোনওদিন দেখতে চাইনি৷ তাই নিজের চেষ্টায় ছবি পরিচালনা করি৷ আমার ভাবনা, ক্যামেরায় আমার চোখ, আমার হাতেই থাকে গোটা ছবির ভার৷ তাই খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই প্রযোজকদের কাছে নিজের ছবি নিয়ে যাই৷ আমার কষ্টের কাজকে আমিই আগে মর্যাদা দিই৷
হলিউডে আপনার আগামী ছবিগুলি?
প্রিয়াঙ্কা- আমার ২টি ছবি মুক্তির অপেক্ষায়৷ এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘আন্ডার দ্য জ্যায’৷ নিউইয়র্কের উদ্বাস্তুদের অবস্থা, নিউইয়র্কে তাদের লড়াই ছবিটিতে দেখানো হয়েছে৷ খুব তাড়াতাড়ি ছবি দুটির ওয়ারল্ড প্রিমিয়ার হবে৷
কোথাও কী ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্বাস্তু নীতির সমালোচনা করেই ‘আন্ডার দ্য জ্যায’ তৈরি?
প্রিয়াঙ্কা- কোনওরকম বিতর্কে যাই়নি৷ যেটা সত্যি সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছি৷ দেখুন, নিউইয়র্কে আপনি সব সম্প্রদায়ের লোক পাবেন৷ এখানে নিউইয়র্ককে সাম্যের প্রতীক বলা হয়, সমতার কথা বলে নিউইয়র্কের মানুষ৷ আদৌ কি সেটা ঠিক? আমি ছবিতে সেটাই তুলে ধরেছি৷
বাংলা ছবি পরিচালনা করতে চান?
প্রিয়াঙ্কা- অবশ্যই, আগে বাংলা ছবিই করতে চাই৷ হলিউড শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছি,করছিও৷ কিন্তু মাটির টান আলাদা৷ সত্যজিৎ রায়, ঋত্ত্বিক ঘটকদের ছবি দেখে বেড়ে ওঠা, আমি তো বাংলাতেই ফিরতে চাই৷ সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই করব৷ বাংলার মানুষ আমার পরিচালিত সিনেমা দেখবেন এটাই আমার বড় প্রাপ্তি হবে৷
নিউইয়র্কই আপাতত প্রিয়াঙ্কার আস্তানা৷ কিন্তু কলকাতায় এসে ছবি পরিচালনা করতে চান প্রিয়াঙ্কা৷ অপেক্ষায় আমরাও৷